সত্যেন সেনের “ইতিহাস ও বিজ্ঞান” একটি অনন্য গ্রন্থ, যেখানে ইতিহাস ও বিজ্ঞানের সম্পর্ককে একই স্রোতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বইটি কেবল ঘটনার ধারাবাহিকতা নয়, বরং দেখায় কিভাবে বিজ্ঞান মানবসভ্যতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে — কিভাবে প্রতিটি যুগে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং নতুন চিন্তাধারার উদ্ভব সমাজ, সংস্কৃতি এবং মানুষের জীবনকে রূপান্তরিত করেছে।

সত্যেন সেন তাঁর গভীর উপলব্ধি থেকে এই বইতে প্রমাণ করেছেন যে বিজ্ঞান কোনো বিচ্ছিন্ন জ্ঞানশাখা নয়; এটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ভেতরে জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে এবং প্রভাব বিস্তার করে। তাই বিজ্ঞানকে বুঝতে হলে ইতিহাস জানা প্রয়োজন, আর ইতিহাসের গতিপথ বুঝতে হলে বিজ্ঞানকে বিচার করতে হয় তার সামাজিক ও বাস্তব প্রয়োগের আলোকে।

বই জুড়ে লেখক আলোচনা করেছেন বিজ্ঞান কীভাবে মানবমুক্তির একটি হাতিয়ার, কীভাবে বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণে ব্যবহার হওয়া উচিত এবং কীভাবে ইতিহাসের প্রতিটি পর্বে বৈজ্ঞানিক চিন্তা সমাজকে বদলে দিয়েছে। শিল্পবিপ্লব থেকে আধুনিক প্রযুক্তি—প্রত্যেক পর্বই এখানে সামাজিক পরিবর্তন, অর্থনীতি, রাজনীতি ও মানুষের চিন্তাভাবনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে উঠে এসেছে। লেখনাশৈলী সহজ, কিন্তু চিন্তার গভীরতা প্রবল; পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে বিজ্ঞান কেবল ল্যাবরেটরি বা আবিষ্কারে সীমিত নয়—এটি মানবজীবনের অংশ।

এই বই ইতিহাসপ্রেমী, বিজ্ঞানমনস্ক পাঠক, গবেষক, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ সকল চিন্তাশীল মানুষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। যারা সময়, সমাজ, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিকে একত্রে দেখে মানবসভ্যতার ধারাবাহিকতা বোঝার চেষ্টা করেন, তাদের কাছে এটি একটি মূল্যবান গ্রন্থ। আধুনিক দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির যুগে বইটি পাঠককে বিজ্ঞানের পেছনের মানবিক ও ঐতিহাসিক সত্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।