বাড়ির সংজ্ঞা, স্মৃতির খোঁজে এক অন্তরযাত্রা

মিহির সেনগুপ্তের "এপার বড়ো মাঘ মাস, ওপার বড়ো কুয়া" বইয়ের এই অংশটি নিছক আত্মজৈবনিক বয়ান নয়—এ এক জটিল অনুভবের ইতিহাস, শিকড়ের টান ও বাস্তুচ্যুতির কষ্টগাথা। লেখক তাঁর স্মৃতির পর্দা উল্টে ফেরেন কেওড়া গ্রামের সেই পুরনো বাড়িতে, যেখানে জন্ম ও শৈশবের ষোলোটি বছর কেটেছিল। মাত্র ষোলো বছরের বসবাস, অথচ “বাড়ি কোথায়?” এই প্রশ্নের উত্তরে আজও অচিন্তিতভাবে উঠে আসে সেই গ্রামের নাম।

এই লেখায় বাড়ি আর বাসার ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও আবেগগত পার্থক্য যেন এক বিস্তৃত চেতনার মানচিত্র এঁকে দেয়। একদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পরিণত হওয়া দেশটির রাজনৈতিক রূপান্তর, অন্যদিকে লেখকের জীবনের পশ্চিমবাংলায় স্থানান্তর, দুটিই যেন মিলে তৈরি করেছে চিরস্থায়ী এক ছন্নছাড়া হওয়ার বোধ।

পূর্ববাংলার গ্রামীণ গৃহব্যবস্থার বহর, তার সংহত পারিবারিক কাঠামো, আর “বাড়ি” শব্দটির মধ্যে নিহিত নির্ভরতার ছায়া যে কী গভীরভাবে মনের মধ্যে গেঁথে থাকে, তার নিখুঁত ভাষ্য উঠে এসেছে লেখকের কলমে। উল্টোদিকে, পশ্চিমবাংলার শহুরে জীবনযাপনে “বাসা” এক সংকুচিত, পৃথক, বিচ্ছিন্ন আবাস হয়ে ধরা দেয়।

রসিকতা ও হাহাকার একসাথে বয়ে আনা বরিশালি বাঙালের ‘হহুন তোর বাফে’ সংলাপ যেন এই লেখার ভাষাগত বৈভব এবং ব্যঞ্জনাপূর্ণ সামাজিক দ্বন্দ্বকে সূক্ষ্ম কৌতুকের মাধ্যমে উন্মোচন করে।

শেষ পর্যন্ত এই টুকরো লেখাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, “বাড়ি” কখনোই শুধু একটি স্থানের নাম নয়। এটি এক সত্তার, এক অস্তিত্বের শিকড়, যাকে আমরা যত দূরেই যাই, কখনোই পুরোপুরি পিছনে ফেলতে পারি না।