‘যুগলবন্দি’— শব্দবন্ধটি কানে এলেই প্রথমেই মনে পড়ে যায় আলি আকবর-রবিশঙ্করের সুরের মূর্চ্ছনা… মনে পড়ে যায় তেজেন্দ্রনারায়ণ-বিক্রম। দূরে কোথাও যখন বেজে ওঠে চৌরাসিয়ার বাঁশি, শিবকুমারের সন্তুরের রিনিরিনিও কি মনের কোণে পাখনা মেলে না? যখন রামনাথের ভায়োলিনের সুরের গহীন ছুঁয়ে যায় জাকিরের তবলা তখন কি অল্প শীত-মিঠেকড়া রোদের যুগলবন্দির বিমূর্ততায় মনকেমন করে না?

মেসি-নেইমার, সামি-বুমরাহ, পল্লব-মুনমুন, সুনীল-শক্তি যুগলবন্দিতে আমরা অবগাহন করে চলেছি অনন্ত সময়রেখা ধরে। যুগের তালে তাল মিলিয়ে যুগলবন্দির হাত বদল হতে হতে স্বাদবদলও হয়েছে… নলেনগুড়ের কেক বা বেকড রসগোল্লা এর হাতে-গরম উদাহরণ। তাহলে সাহিত্য জগতই বা ব্রাত্য থাকবে কেন!

জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কিছুমাত্র সাহিত্যচর্চা করেননি বাংলাদেশে এমন মানুষ কমই আছেন। এখানকার শ্যামল জল-হাওয়ায় এমন কিছু আছে যা মানুষকে দু’ লাইন লিখিয়েই ছাড়ে। পিয়ালিও তার ব্যতিক্রম নন। কৈশোর থেকে শুরু করে আজও কবিতারা তাঁর মনের ভেতর উঁকি দিয়ে যায়। তাই এই সংকলনের কবিতাগুলি রচনার সময়কালের ব্যপ্তি অনেকটা দীর্ঘ। একটি কবিতা থেকে আর একটি কবিতার দূরত্ব কখনো দিন-মাস-বছর বা কখনো এক যুগেরও বেশি। বহু বছর ধরে যেন হাসি, কান্না, মিলন, বিরহ, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখা। কখনো কবিতাগুলিতে এসেছে প্রকৃতির রং, রূপ, গন্ধ, বর্ণের অপার রহস্যময়তা, কখনো আবার কোনো কবিতায় উৎসারিত হয়েছে কবির নিজস্ব জীবনবোধের নির্যাস।

গল্পগুলি অবশ্য এতটা বৈচিত্র্য দাবি করে না। এই সংকলনে গ্রন্থিত গল্পগুলির বিষয়বস্তু সেই আদি অকৃত্রিম প্রেম। ভালোবাসা, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুচ্চারিত। প্রায় সব ক’টি গল্পই পাপিয়ার কৈশোর বা প্রথম যৌবনে লেখা। তাই কাঁচা হাতের ছাপ মুছে এবং সমকালীন করার প্রয়াসে সেগুলোকে বেশ কিছু ঘষা-মাজা করে ভালোবাসার আতর মাখিয়েছেন লেখক।

যুগলবন্দির এই যে অপরূপ ঠমক-ঠামক, আপাত গম্ভীর যাওয়া-আসা তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই কবিতা আর গল্পের এক সম্মিলিত সংকলনে যুগলবন্দির প্রয়াস করেছেন পিয়ালি ও পাপিয়া।   কাব্য-গল্পের এই যুগলবন্দি সঠিক সুরে বাজল কিনা, শেষ বিচারের সেই ভার পাঠকেই হাতেই ন্যস্ত হল।