হাওড়া থেকে ভরতপুরগামী যোধপুর এক্সপ্রেসের সম্পূর্ণ অপরিচিত দুই সহযাত্রী মিঃ বি. কে. লক্ষ্মণ আয়েঙ্গার এবং মিস্ ঊর্মিলা মিত্র। ইতিহাসের গবেষক দুজনেই, কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। গবেষণার উপাদান সংগ্রহ করতে দুজনেরই গন্তব্য মধ্য-পশ্চিম ভারত। লক্ষ্মণ ও ঊর্মিলার পরিচয় দুজনের নামের আশ্চর্য সমাপতনের কারণে। ক্রমশ তাদের পরিচয় প্রগাঢ় হয়। একসময় গড়ে ওঠে বন্ধুতা।

 অধ্যাপক লক্ষ্মণের গবেষণার বিষয় লক্ষ্মণ মন্দিরে লক্ষ্মণের বিগ্রহ। সেই বিষয়েই সে একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে আর্টিকেল লিখতে শুরু করেছে। তার ইচ্ছা, রামায়ণে লক্ষ্মণ ও ঊর্মিলার চরিত্রের যে সমস্ত দিক এবং ঘটনাসমূহ তার অপছন্দ, সেই অংশগুলো সে তার নিজের মতো করে রচনা করবে। সেটা হবে তার নিজস্ব বিনির্মাণ। আগামীতে দ্বিভাষিক মুদ্রিত বইরূপে সেই বিনির্মাণ সে প্রকাশ করবে।

 ঊর্মিলা আর্কেওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় চাকরি করে। মিউজিয়ামে তার ডেপুটেশন পোস্টিং। সম্প্রতি সে গবেষণার সুযোগ পেয়েছে। তার গবেষণার বিষয়বস্তু মধ্য-পশ্চিম ভারতে অবস্থিত লক্ষ্মণ মন্দিরের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। তবে গবেষণা শুরুর পরে সে কিছুটা দিশাহারা।

 অভিজ্ঞ গবেষক লক্ষ্মণ ঊর্মিলাকে গবেষণার কাজে সাহায্য করতে থাকে। ঊর্মিলা প্রথম দর্শনেই লক্ষ্মণের প্রেমে পড়ে। লক্ষ্মণও ঊর্মিলার প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হয়। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায় যেতে খুব বেশি সময় লাগে না।  এমনকি ওরা লিভ-ইন রিলেশনশিপে থাকার সিদ্ধান্তও নিয়ে নেয়। দুজনে একসঙ্গেই মধ্য-পশ্চিম ভারতে টেম্পল-ট্যুর শুরু করে।

 লক্ষ্মণের ভাবনায় রামায়ণের বিনির্মাণ ‘যদি এমন হত, তবে কেমন হত…’ এই ধারণাতেই এগিয়ে চলে।  এগিয়ে চলে  কাহিনিও। বিস্তৃত হতে থাকে লক্ষ্মণ-ঊর্মিলার প্রেমের পরিধি। পরিশেষে ওদের সম্পর্ক প্রমাণ করে মানুষের কল্পনার জগত ঠিক কতটা শক্তিশালী হতে পারে।  এই উপন্যাসে চিত্রায়িত হয়েছে, বাস্তবতা ও পরাবাস্তবতার মিশেলে মানুষ কাল্পনিক জগতের সপ্তম স্বর্গে বিচরণ করতে পারে কত অনায়াসে।

 একটি নিটোল প্রেমকাহিনি, রামায়ণ মহাকাব্যের নির্বাচিত অংশের বিনির্মাণ এবং মধ্য-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের টেম্পল-ট্যুরের প্রেক্ষাপটে গাঁথা হয়েছে অনন্য সাধারণ এই উপন্যাস।