Writer : Abadhut (Dulal Chandra Mukhopadhyay)
Edited By : NA
Compiled By : NA
Translated By : NA
Publishers : Mitra O Ghosh Publishers Pvt.Limited
- Shipping Time : 10 Days
- Policy : Return/Cancellation?
You can return physically damaged products or wrong items delivered within 24 hours with photo/video proof.
Contact Customer Support for return initiation and receive return authorization via email. Securely package for return.
Refunds for eligible returns are processed within 7-10 business days via Bank Transfer.
Order cancellation allowed within 24 hours of placing it. Standard policy not applicable for undamaged/wrong product cases. Detailed info. - Genre : Literature>Novels & Novellas
- Publication Year : 2023
- ISBN No : 978-81-72937-82-9
- Binding : Normal Jacket with Pasteboard
- Pages : 155
- Weight : 300 gms
- Height x Width x Depth : 8.7x5.9x0.5 Inch
If so, it will be notified
About the Book
"উদ্ধারণপুরের ঘাট।
কান্নাহাসির হাট।
ছত্রিশ জাতের মহাসমন্বয় ক্ষেত্র৷
দুনিয়ার সর্বত্র দিনের শেষে নামে রাত, রাতের পিছু পিছু আসে দিন।উদ্ধারণপুরের ঘাটেও সে নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। "
— এই কথা কটা দিয়েই বইয়ের সূচনা। বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণের সাথে আশ্চর্য থ্রিল মিশিয়ে এক অভিজাত সৃষ্টি করেছিলেন কালিকানন্দ অবধূত। “উদ্ধারণপুরের ঘাট”, একটি শ্মশানক্ষেত্র — যা মৃত্যু ও জীবনের সংযোগস্থল, যেখানে কান্না আর হাসি একসঙ্গে ঘোরে, আর জীবনের উদ্ভট, অন্ধকারতম রূপগুলো আত্মপ্রকাশ করে নিঃশব্দে।
উপন্যাসের মূল পটভূমি পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া উপকণ্ঠে অবস্থিত উদ্ধারণপুরের শ্মশানঘাট। এই স্থানটি শ্রীচৈতন্যদেবের পার্ষদ উদ্ধারণ দত্তের নামে পরিচিত, যেখানে শ্মশানঘাটের পাশাপাশি স্নানঘাটও রয়েছে। লেখক এই শ্মশানঘাটের জীবন্ত চিত্রণ করেছেন, যেখানে জীবনের শেষ পরিণতি ও মৃত্যুর পরবর্তী কার্যকলাপের বিবরণ পাওয়া যায়। উদ্ধারণপুরের ঘাট হচ্ছে এমন এক স্থান, যেখানে হরেক রকমের মানুষ এসে ভীড় করে প্রায় এক উদ্দেশ্যে। এটি যে শ্মশানক্ষেত্র, মানুষ মরলে পরে তাকে হয় চিতায় তোলা হয়, নয়তো গঙায় ভাসানো হয়। আর গোঁসাইদের বা তন্ত্রসাধকদের আখড়ায় চলে অদ্ভুত রকমের সাধনা। লেখক বসে থাকেন মরা মানুষের ফেলে যাওয়া বেনারসী, কাঁথা দিয়ে লক্ষ লক্ষ জীবাণুর সাথে সহাবস্থানে মড়ার গদিতে, সাধনার ফাঁকে ফাঁকে পান করেন মহাকারণ, যা জ্বলতে জ্বলতে নেমে যায় বুক বেয়ে পাকস্থলিতে আর দেখেন বিচিত্র পৃথিবীর বিচিত্র মানুষের সব লীলা!
বীভৎস রসের এই উপন্যাসে এসেছে মরাদেহের বীভৎস বর্ণনা, কিন্তু এই গ্রন্থের মূল ছিল না তন্ত্রসাধনা৷ বরং অবধূতের নিজের ভাষাতেই তাঁর সব কাহিনীর নায়ক মানুষ, জীবনে তিনি মানুষ দেখেছেন, লাভ করেছেন নানা অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতায় ভরাযৌবনা নিতাই আসে বোষ্টমী হয়ে, তার জীবনের গতিপথ নানান সময় মোড় নেয় নানান দিকে৷ কিন্তু বলে যায় এক চরম সত্য, 'মড়া নিয়ে মেতে থাকার ফুরসৎ নেই আমার। জ্যান্তদের যদি একটু শান্তি দিতে পারি তা'হলেই আমি নিজে মরে শান্তি পাব ।'
রামহরি ডোম আর তার পরিবারের অদ্ভুত কার্যকলাপ চোখে লাগে। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে শ্মশানে এসে মদে ডুবে থাকে রামহরি, ওদিকে বউ দোর দেয় কোন বাবুর সাথে। পরদিন আবার পাঁক ধুয়ে সাফ করে বেশ তো সংসার করে! আর চরণদাস বোষ্টমের জীবনের গূঢ়কথা আবিষ্কার হয় তার মৃত্যুর পর। এদিকে সম্ভ্রান্ত সিঙিবাড়ির বউ, যিনি রোগে গলা-পঁচা স্বামীর শ্রূশুষা করেছেন একা হাতে, তিনিই স্বামীর মৃত্যুর পরপরই কেন একগাদা মদ গলায় ঢালেন? কোন জ্বালা জুড়াতে?
এই উপন্যাসে ব্যবহৃত রূপক বাংলা সাহিত্যে বিরল। এই নানাবিধ রূপকসমূহ একদিকে যেমন গল্পের প্রেক্ষাপটকে গভীরতা দেয়, অন্যদিকে তারা সমাজের বিভিন্ন দিক, মানুষের অন্তর্নিহিত দিক, এবং জীবনের শেষ মুহূর্তের সংকটকেও চিত্রিত করে। রূপকগুলো শুধুমাত্র বাহ্যিক উপাদান হিসেবে কাজ করে না, বরং তারা পাঠকের মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগতে এক গভীর প্রতিফলন সৃষ্টি করে।
উপন্যাসে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ রূপকের অন্যতম হলো 'শ্মশানঘাট'। এই রূপকটি মৃত্যু এবং জীবনের সমাপ্তি কিংবা পরবর্তী জীবনের এক পটভূমি হিসেবে চিহ্নিত। শ্মশান শুধু মৃতদেহের পুড়ে যাওয়ার স্থান নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক স্থান, যেখানে আত্মার মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়া যায়। এখানে শ্মশানের ভয়াবহতা বা শ্মশানের বীভৎসতা আসলে জীবনের সংকট এবং দুঃখের প্রতীক। জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যবর্তী সীমানায় শ্মশান দ্যাখানো হয়েছে, যেখানে চরিত্ররা নিজেদের অস্তিত্বের অর্থ খুঁজে পায়।
দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য রূপক হলো 'আগুন'। আগুন একাধারে শুদ্ধিকরণ বা পাপ মুক্তির প্রতীক এবং অন্যদিকে মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতীক। শ্মশানঘাটের আগুন মৃতদেহের দাহ করতে ব্যবহার করা হলেও, এটি আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত। আগুনের মাধ্যমে মৃত্যু শুদ্ধ হয় এবং এক নতুন শুরু হয়, যেমন মানুষ মৃত্যু এবং জন্মের চক্রে আবদ্ধ থাকে, কিন্তু এই আগুনের মধ্য দিয়ে মুক্তি লাভ করতে পারে।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ রূপক 'নদী'। নদী এখানে জীবন ও মৃত্যুর প্রবাহ। এই প্রবাহকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। নদীর স্রোতের মতো জীবনও অবিশ্রান্ত বহমান। তা নিরন্তর বহতা -- কখনও শান্ত, কখনও প্রবল। নদী কখনও অবাধ প্রবাহিত হয়, আবার কখনো বাঁধে আটকা পড়ে, ঠিক যেমন মানুষের জীবন প্রবাহ মাঝে মাঝে বাধাপ্রাপ্ত হয়। নদী, যা নিত্য প্রবাহিত, মৃত্যুর পর জীবনের ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। এটি জীবনের চিরন্তন যাত্রার প্রতীক।
চতুর্থ উল্লেখযোগ্য রূপক 'ভুত-প্রেত'। এই উপন্যাসে ভূত-প্রেত মৃতদের প্রতীক এবং জীবনের অশান্ত বা অপূর্ণ দিকের প্রতিনিধিত্ব করে। ভূত-প্রেতেরা মৃতদের আত্মা -- এমন আত্মা যারা শাস্তি বা মুক্তি খুঁজছে। আর তাদের মধ্য দিয়েই অশান্তি এবং দুঃখের রূপ ফুটে উঠেছে। এই রূপক দিয়ে অবধূত জীবন এবং মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থার অস্থিরতা এবং আত্মার মুক্তির প্রশ্ন তুলে ধরেছেন।
এই উপন্যাসের পঞ্চম গুরুত্বপূর্ণ রূপক 'তন্ত্রসাধনা'। তন্ত্রের মাধ্যমে জীবনের গোপন দিক এবং আত্মার স্বাধীনতার সন্ধান পাওয়া যায়। তন্ত্রশাস্ত্রের চর্চা শ্রীচৈতন্য এবং অন্যান্য তান্ত্রিক সাধকদের জীবন দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে দেহ, মন, আত্মা ও জীবনের দিকগুলি একত্রিত হয়ে ব্রহ্মের সঙ্গে ঐক্য স্থাপন করতে চাওয়া হয়।
ষষ্ঠ রূপক 'বসন্ত'। বসন্ত ঋতু একটি রূপক হিসেবে মানব জীবনের নবজন্ম এবং প্রফুল্লতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। বসন্তের নতুন সূচনা এবং জীবনের পুনর্জন্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি জীবনের শক্তি এবং নতুন আশার প্রতীক, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে হাঁটার সময় পুনর্জীবিত করে।
সপ্তম রূপক 'ধোঁয়া'। ধোঁয়া, বিশেষত শ্মশানঘাটে মৃতদেহের দাহের পর যে ধোঁয়া তৈরি হয়, এটি মানুষের আত্মার অস্পষ্টতা ও অস্থিরতার রূপক। ধোঁয়ার এই অস্থিরতা মানুষের জীবনের অস্থিরতা এবং মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা প্রতিনিধিত্ব করে। শ্মশানের আগুন থেকে উঠে আসা ধোঁয়া চিরন্তন দুঃখের চিহ্ন হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা জীবনের অনিশ্চিততা এবং মৃত্যুর শাশ্বত সত্যকে প্রকাশ করে।
অষ্টম রূপক 'বাষ্প'। বাষ্প বা গরম ধোঁয়া শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক স্তরে জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের চিত্রণ। এটি জীবন ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী এক স্থিতি, যা মানুষের অস্তিত্বের অস্থিরতা এবং গতিশীলতাকে তুলে ধরে। বাষ্পের মতো মানবজীবনও অস্থায়ী, ক্ষণস্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল।
এই রূপকসমূহের মাধ্যমে অবধূত শুধুমাত্র মৃত্যুর আধ্যাত্মিক অর্থ তুলে ধরেননি, বরং মানুষের আধ্যাত্মিক যাত্রা, জীবনের লক্ষ্য এবং আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা জানিয়েছেন। এগুলি উপন্যাসটির গভীরতা এবং জটিলতা বৃদ্ধি করেছে, যেখানে আধ্যাত্মিকতা, জীবন এবং মৃত্যুর প্রসঙ্গে এক অসীম দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন নানা কিসিমের জীবন দর্শন দেখা যায় উদ্ধারণপুরের ঘাটে যার সাথে মিশে রয়েছে রাত, দিন, কান্না, বিস্ময়, স্বপ্ন, পৈশাচিক হাসি কিংবা ভালোবাসা। লেখক নিজেই হয়ে ওঠেন দর্শক ও অংশগ্রহণকারী, যিনি বসে থাকেন "মড়ার গদিতে", আর জীবনের অদ্ভুত দর্শনকে টেনে আনেন সাহিত্যের পটে। এটি শুধু এক আধ্যাত্মিক অভিযাত্রা নয় — এ এমন এক ভয়ঙ্করভাবে জীবন্ত আখ্যান, যেখানে প্রতিটি চরিত্র বয়ে আনে মৃত্যুর গন্ধ, আবার জাগিয়ে তোলে জীবনের নতুন প্রশ্ন। ভিন্ন স্বাদের পাঠকদের জন্য এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
অবধূত (১৯১০ - ১৩ এপ্রিল, ১৯৭৮) বা কালিকানন্দ অবধূত ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক ও তন্ত্রসাধক। তাঁর প্রকৃতনাম দুলালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। জন্ম কলকাতার ভবানীপুরে। পুত্র অমল মুখোপাধ্যায়ের জন্মের পর প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যু হলে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে সন্ন্যাস (অবধূত) গ্রহণ করেন। সন্ন্যাসজীবনে তাঁর নাম হয় কালিকানন্দ অবধূত। সন্ন্যাসজীবনে তাঁর ভৈরবী স্ত্রীও ছিল। হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় স্বপ্রতিষ্ঠিত রুদ্রচণ্ডী মঠে তাঁর মৃত্যু হয়। অবধূত ছদ্মনামে তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে মরুতীর্থ হিংলাজ নামক উপন্যাস রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। এই উপন্যাসটি অবলম্বনে একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন বিকাশ রায় ও উত্তমকুমার। তাঁর অপর বিখ্যাত গ্রন্থ উদ্ধারণপুরের ঘাট (১৯৬০)।