১৯৪৭ সালের দেশভাগ — এক গভীর সংকট, যার অভিঘাত আজও বাঙালিকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান তো মেলেনি, বরং নতুন নতুন জটিলতা জন্ম নিয়েছে। তাই আজও মনে প্রশ্ন জাগে — দেশভাগ কি তখনকার নেতৃত্বের অপরিণামদর্শিতার ফল?

এই সংকলনে স্থান পেয়েছে ১৯৪৬-৪৭ সালের সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন ব্যক্তির স্মৃতিকথার নির্বাচিত অংশ, যা সেই সময়কার 'হিন্দু' বাঙালির মানসিকতা বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক। সত্তর বছর পেরিয়ে আসার পর এইসব লেখা পাঠ করতে গিয়ে পাঠকের মনে অস্বস্তি জাগতে পারে। অনেক লেখায় সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। তবে, সেই সময় 'হিন্দু' বাঙালিরা ঠিক কী পরিস্থিতিতে, কোন পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন—তা বুঝতে গেলে এ ধরনের অস্বস্তিকে পাশ কাটানো সম্ভব নয়।

এর আগে "দাঙ্গা থেকে দেশভাগ: 'হিন্দু' বাঙালির প্রতিক্রিয়া" শিরোনামে সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছিল। এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু 'মুসলিম' বাঙালি।

১৯৪৬-৪৭ সালে ধর্মীয় পরিচয়ই হঠাৎ করে বাঙালির রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্তিত্বের মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে। বাঙালি মুসলমান সমাজ তখন দ্বিধাবিভক্ত—একদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ 'পাকিস্তান' নামক একটি পৃথক রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর, অন্যদিকে একটি অংশ অখণ্ড ভারতের সমর্থনে অটল। কেন এই বিভাজন? কীভাবে দাঙ্গা ও দেশভাগ মুসলিম সমাজকে প্রভাবিত করেছিল?—এই সংকলনে সেই প্রশ্নগুলিরই অনুসন্ধান করা হয়েছে।

দেশভাগ যে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু অন্য কোনও পথ বেছে নেওয়া 'হিন্দু' বাঙালির জন্য সত্যিই কি সম্ভব ছিল? এই সংকলনে সেই জিজ্ঞাসারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।