হারিয়ে যাওয়া এক নগরীর খোঁজে: দেবলগড়ের গোপন ইতিহাস

নদিয়া জেলার ‘দেবলগড়’ আজ আর কেবল একটি ভূগোলের নাম নয়, এটি হয়ে উঠেছে ইতিহাসপ্রেমী এবং গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কুষাণ যুগ, গুপ্ত যুগ থেকে শুরু করে পাল-সেন যুগের অসংখ্য নিদর্শন চাপা পড়ে রয়েছে এর ঘন জঙ্গল, নদীনালা আর উর্বর মাটির গভীরে। আশ্চর্যের বিষয়, আজও এখানে কোনও সরকারী উৎখনন সম্পন্ন হয়নি। তবুও, দশকের পর দশক ধরে আবিষ্কৃত হচ্ছে বিরাট প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, প্রাচীন নগরীর চিহ্ন, মুদ্রা, অস্ত্র ও অজস্র প্রত্ন সামগ্রী, যা এক হারিয়ে যাওয়া অতীতের স্পন্দন পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের কাছে।

দেবলগড়ের প্রত্ন পরিচয় কী? এ কি হারিয়ে যাওয়া সেই সেন রাজধানী ‘বিজয়পুর’, যাকে ধ্বংস করেছিলেন বখতিয়ার খিলজী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কলম ধরেছেন দুই বাংলার খ্যাতনামা গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা, যারা বছরের পর বছর দেবলগড়কে দেখেছেন, অনুভব করেছেন, বুঝেছেন তার মৌন ইতিহাস।

ভূপ্রত্নতত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে হাজার বছরের নদী-নালা ও ভূমিরূপের পরিবর্তন এবং তার সাথে সভ্যতার বিবর্তন। গঙ্গা, যমুনা, মরালি আর ইছামতি নদীর মোহনা ঘেরা দেবলগড় কিভাবে যুক্ত ছিল উত্তরবঙ্গ ও রাঢ়বঙ্গের সাথে? কোন বাণিজ্যপথ, কোন সাংস্কৃতিক যোগসূত্র গড়ে তুলেছিল তাকে সমগ্র প্রাচীন বঙ্গের সঙ্গে?

দেবলগড়ের সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিচয় এই বইয়ে উদ্ঘাটিত হয়েছে বহু দিক থেকে। ভিন্ন ভিন্ন গবেষক-দৃষ্টিভঙ্গিকে একত্র করে রচিত হয়েছে এমন এক গ্রন্থ, যা পাঠককে নিয়ে যাবে প্রাচীন বঙ্গের অনাবিষ্কৃত রহস্যের সন্ধানে, নতুন আলোয় দেখাবে ইতিহাসের বহু অজানা অধ্যায়।

'ভূপ্রত্নতত্ত্বের আলোকে দেবলগড়' শুধু ইতিহাসের বই নয়, এটি এক সময়ভ্রমণ — যেখানে মাটি, নদী আর ধ্বংসাবশেষ কথা বলে অতীতের গৌরবগাথা।