সত্তরের দশকের আলো-আঁধারি: ‘রক্তগোলাপ’

"ইতিহাস শুধু ঘটনাপ্রবাহ নয়, সে ভালোবাসার, স্বপ্নভঙ্গের, এবং লড়াইয়ের এক জীবন্ত স্মারক।"

সত্তরের দশক—একটা সময়, যা একইসঙ্গে নৈরাজ্যের, বিপ্লবের, আর শিল্প-সাহিত্যের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। একদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে তরুণ বিপ্লবীদের স্বপ্নভঙ্গের বেদনাদায়ক গল্প, অন্যদিকে সাহিত্য-সংস্কৃতির এক সোনালি যুগের সূচনা। এই সময়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে এসেছে অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘রক্তগোলাপ’, যা শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নয়, একটি প্রেমের আখ্যান, সম্পর্কের টানাপোড়েনের এক সংবেদনশীল চিত্র।

এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুব্রত ও মল্লিকা—একজন আদর্শবাদী কমিউনিস্ট যুবক এবং একজন সাহসী আধুনিকা যুবতী। তাদের সম্পর্কের ওঠানামার মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে রাজনীতি, আদর্শ, সমাজের পরিবর্তন ও ব্যক্তিগত সংকটের গল্প। উপন্যাসে রয়েছে কাশীপুর-বরানগর হত্যাকাণ্ডের বাস্তব চিত্র, পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব, এবং সেই সময়ের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের নিখুঁত বিশ্লেষণ। কিন্তু ‘রক্তগোলাপ’ শুধুই কোনো ইতিহাসের ডকুমেন্টারি নয়—এটি ইতিহাসের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে মানুষের আবেগ, প্রেম, দ্বন্দ্ব আর আকাঙ্ক্ষার এক নিখুঁত উপস্থাপনা।

এই উপন্যাসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তার ন্যারেটিভ স্টাইল—এখানে অতীত স্মৃতিচারণ নয়, বরং সব ঘটনা একাত্তর সালের বর্তমান থেকে বলা হয়েছে। ফলে পাঠক এক নিঃশ্বাসে সময় ও ইতিহাসের অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারেন।

যারা রাজনৈতিক পটভূমিতে প্রেম, বাস্তবতা ও তৎকালীন সমাজের দ্বন্দ্বের গল্প খুঁজছেন, তাদের জন্য ‘রক্তগোলাপ’ শুধু একটি উপন্যাস নয়, বরং এক সময়-যাত্রা।